অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কবুতর চুরির মিথ্যা অপবাদে স্থানীয় বিএনপি নেতা ইউপি সদস্যর নেতৃত্বে দুই শিশুকে গাছের সাথে বেঁধে মধ্যযুগীয় নির্যাতন করা হয়েছে। গুরুতর আহতাবস্থায় এক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহত ছাত্রকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এঘটনায় আহত শিশুর পরিবার থেকে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বিলম্বে প্রাপ্ত স্থানীয় একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের ছোট বাশাইল গ্রামের খোকন বেপারীর ছেলে ছোট বাশাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র সাগর বেপারী (১০) এবং একই এলাকার মোহাম্মাদ আলী শিকদারের ছেলে বাশাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র তুষার শিকদার (১২) কে কবুতর চুরির মিথ্যা অপবাদে শুক্রবার বিকেলে ছোট বাশাইল কালুশাহ মাজারের উত্তরপাশে দুই শিশুকে নারিকেল গাছের সাথে বেঁধে লোকজনকে মোবাইলে সংবাদ দিয়ে রাজিহার ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক মো. বরকত উল্লাহর নেতৃত্বে স্থানীয় মনির চৌকিদার, নাসির চৌকিদারসহ স্থানীয়রা মিলে তিনঘন্টা ব্যাপি দুই শিশুর উপর শারিরিক নির্যাতন চালায়। বরকত প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হলেও এখনও শপথ পরতে পারেননি। সে ওই গ্রামের মৃত মতিউর রহমান মিয়ার ছেলে।
নির্যাতনের সংবাদ শুনে সাগরের মা রওশনারা বেগম ঘটনাস্থলে এসে তার ছেলেকে নিযার্তন করার দৃশ্য দেখে ইউপি সদস্যের কাছে অনুরোধ করে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে চাইলেও নির্যাতনকারীরা তার কথায় কোন কর্ণপাত করেনি। প্রায় তিনঘন্টা দুই শিশুর উপর নির্যাতন চালিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়। ছেলেকে মারধরের প্রতিবাদ করায় সাগরের মা রওশনারা বেগমকে চুন্নু চৌকিদারের ছেলে নাসির চৌকিদার তার বাড়ি গিয়ে মারধর করে লাঞ্ছিত করে। পরে সাগরের মা রওশনারা বেগম ও মামা আব্বাস উদ্দিন আহত দুই শিশুকে উদ্ধার করে গুরুতর অবস্থায় সাগরকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে এবং তুষারকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। সাগরের মা রওশনারা বেগম সাংবাদিকদের জানান, আমার ছেলেকে বিএনপি নেতা ইউপি সদস্য গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করেছে। তার শারিরীক অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।অভিযুক্ত মেম্বর বরকত উল্লাহ বলেন, আমি কোন নির্যাতন করিনি। মনির ও অন্যরা শিশুদের নির্যাতন করেছে। রাজিহার ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াস তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, এই নির্যাতনের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে ওসি আমাকে ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন। এব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নির্যাতিতদের পরিবার থেকে মামলা করলে আমরা আইনানূগ ব্যবস্থা নেব।
উল্লেখ্য, এর দু’দিন পূর্বে একই গ্রামের রাজ্জাক ফকিরের ছেলে বাশাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল্লাহ ফকিরকে ১০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। সে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।